ইসরায়েলে তিনজনে একজন দেশ ছাড়তে চাইছেন

প্রকাশিত: ৭:১২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০২৩

ইসরায়েলে তিনজনে একজন দেশ ছাড়তে চাইছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইসরায়েলে বিচার বিভাগের ক্ষমতা কমাতে আইন সংস্কারে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে চলছে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। প্রতি সপ্তাহে হাজারো ইসরায়েলি বিক্ষোভ করছেন। এই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন এক প্রবণতা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে উঠে এসেছে, ইসরায়েলের প্রতি তিনজনের একজন নাগরিক দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন। খবর বিবিসি।

দেশ ছাড়তে চান, এমন একজন ইসরায়েলি অধ্যাপক চেন হফম্যান। গত শনিবার রাতে তেল আবিবে যে বিক্ষোভ হয়েছে, তাতে হফম্যানও অংশ নিয়েছিলেন। সেখানেই এই চিকিৎসক বলেন, ‘রাস্তায় গিয়ে বিক্ষোভ করা আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। কিন্তু আমরা এটা করতে বাধ্য হচ্ছি; কারণ, আমাদের দেশকে আমরা হারিয়ে ফেলছি। আমাদের কাছে বিষয়টা এখন এমনই মনে হয়।’

চিকিৎসক হিসেবে ইসরায়েলে বিশেষ খ্যাতি আছে হফম্যানের। তিনি এখন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে তার যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদেরও বিদেশ যেতে উৎসাহিত করছেন।

কেন বিদেশে স্থায়ী হতে চাইছেন, এর ব্যাখ্যায় হফম্যান বললেন, ‘কয়েক বছরের ছুটি নিয়ে আমি লন্ডন যাচ্ছি। এর মাধ্যমে আমি মূলত দেখতে চাইছি, বিদেশে থাকতে পারব কি না। যদি দেখি যে (ইসরায়েলে) পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে, তাহলে আর ফিরব না। কোথাও জায়গা খুঁজে নেব।’

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ইসরায়েলে বিচার বিভাগে সংস্কার আনতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে করে দেশটির গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। তবে দেশটির কট্টর ডানপন্থী বর্তমান সরকারের দাবি, এতে করে বিচার বিভাগের সঙ্গে আইন বিভাগের ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হবে। কারণ, বিদ্যমান আইনে পার্লামেন্টের যেকোনো সিদ্ধান্ত চাইলে সুপ্রিম কোর্ট বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

তবে বিক্ষোভকারীদের কারও কারও ধারণা, বিচার বিভাগের ক্ষমতা কমিয়ে যে আইন পাস হয়েছে এবং আরও যেসব সংস্কার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা থেকে পিছু হটবে সরকার। তবে বেশির ভাগই এমনটা ভাবছেন না। এ জন্যই বিক্ষোভকারীদের বড় অংশ দেশ ছেড়ে যাওয়ার কথাই ভাবছে।

বিচার বিভাগের ক্ষমতা কমাতে সরকারের নেওয়া সংস্কার পরিকল্পনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছেন সারাহ। এই নারী বললেন, ‘এটা (দেশ ছেড়ে যাওয়া) আমার জন্য হবে হৃদয়বিদারক এক ব্যাপার। কিন্তু আমি এমন দেশে সন্তানদের লালন-পালন করতে চাই না, যেখানে গণতন্ত্র নেই।’

ইসরায়েলের অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলিদের মধ্যে দেশান্তরি হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। তারা বলছেন, বিচার বিভাগের সংস্কারে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া ইসরায়েলিদের মধ্যে দেশ ছাড়ার মানসিকতা বাড়িয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলে উদারবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে পরিচিত জনসংখ্যা ক্রমে কমছে। কারণ, এসব নাগরিক তাদের উদারপন্থী জীবনযাপনের স্বাধীনতায় ক্ষমতাসীনদের হুমকি মনে করছেন। বর্তমানে তাঁদের ভয়, বিচার বিভাগও আর তাঁদের নাগরিক অধিকার রক্ষা করতে পারবে না।

বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগের পথে হেঁটেছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন সরকার। এই সরকারকে ইসরায়েলে এযাবৎকালে সবচেয়ে ডানপন্থী সরকার বলা হচ্ছে বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগের পথে হেঁটেছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন সরকার।

R/N

আমাদের তথ্যচিত্র গান কবিতা নাটক ভালো লাগলে ফেসবুকে শেয়ার করুন।
0Shares