সিলেট ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
তবে কি ‘ইন্ডিয়া’ নাম ত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশের একমাত্র নাম হতে চলেছে ‘ভারত’? জাতীয় সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শেষের মাত্র এক মাসের মধ্যেই ফের বিশেষ জরুরি অধিবেশন তলব করেছে মোদি সরকার। বিশেষ এই অধিবেশন ঠিক কী কারণে তা নিয়ে দেশজুড়ে জল্পনার শেষ নেই। এর মধ্যেই ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর একটি চিঠিকে কেন্দ্র ভারতের ‘ইন্ডিয়া’ নাম ত্যাগের বিতর্ক তীব্র আকার ধারণ করেছে।
আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ বৈঠক। ৯ তারিখ রাষ্ট্রপতি মুর্মু বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান এবং সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীকে নৈশভোজে নিমন্ত্রণ করেছেন। নিমন্ত্রণপত্র গিয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’-এর তরফে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পাঠানো নিমন্ত্রণপত্রে পরিচয় হিসাবে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে যে স্বাধীনতার পরে এই প্রথম কোনো সরকারি চিঠিতে প্রেসিডেন্ট অব ভারত কথাটি লেখা হয়েছে। তার পরই নতুন কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে ইন্ডিয়া নামটি কি পাকাপাকিভাবে ছেড়ে দেবে ভারত?
এ মাসের ১৮ তারিখ সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে সরকার। তখন দেশের নাম পাকাপাকিভাবে ভারত করার জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব আনা হবে কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে।
বিরোধী জোটের নাম ইন্ডিয়া দেয়া ইস্তক ভারতে জাতীয় রাজনীতিতে সম্প্রতি নতুন বিতর্ক উস্কে উঠেছে। ইন্ডিয়া নাকি ভারত! নরেন্দ্র মোদী ও তার অনুগামীরা ইন্ডিয়া শব্দটিকে প্রকাশ্যেই কখনও ঔপনিবেশিক বোঝা বলছেন, কখনও বা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে জুড়ে দেখাতে চাইছেন। এরপরেও ইন্ডিয়া নাম শুধু বিতর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার খোদ রাষ্ট্রপতি ‘ভারত’ নাম ব্যবহার করাতেই বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
রাষ্ট্রপতির ওই চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই গেরুয়া শিবিরের একাংশ উল্লাস শুরু করেছেন। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশ্বর্মা এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, রিপাবলিক অব ভারত। বিজেপি নেতারা বলতে শুরু করেছেন, জয় ভারতের জয়! এমনকি বিজেপির শরিক দলের নেতারাও কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, দেশের নাম ভারতই তো। এতে আপত্তি কোথায়?
এর আগে সংবিধান সংশোধন করে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার পাশাপাশি ইন্ডিয়া শব্দটি মুছে ফেলার দাবি অনেক আগে থেকেই করে আসছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ।
সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের এক সভায় ইন্ডিয়া নামের বিতর্ক উসকে প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা পদ্ম শিবিরের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য হরনাথ সিং বলেন, ‘এক দেশের দুটি নাম কেন থাকবে? কেন বিদেশি শব্দ দেশের নামের সঙ্গে বয়ে বেড়াব আমরা। দেশের নাম হোক শুধুই ভারত।
তার বক্তব্য, ব্রিটিশরা ভারতীয়দের খাটো চোখে দেখত। সেই জন্য ইন্ডিয়া শব্দটি ব্যবহার করত ভারতীয়দের সম্পর্কে। এটা আসলে ব্রিটিশদের গালাগাল। ভারতীয়দের ব্রিটিশরা মনে করত অশিক্ষিত, মূর্খ। তার দাবি, শব্দটি দাসত্বের প্রতীক। অন্যদিকে, ভারত শব্দটি সংস্কৃতির ধারক বাহক।’
সংবিধান সংশোধন করে ইন্ডিয়া শব্দটি দেশের নাম থেকে বাদ দেয়ার দাবি তুলেছেন এই বিজেপি সংসদ সদস্য। যদিও সংসদের আসন্ন বিশেষ অধিবেশনেই এজন্য বিল আনার মতো সুনির্দিষ্ট দাবি তোলেননি তিনি।
তবে প্রবীণ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিশেষ অধিবেশনে দেশের নাম বদলের জন্য বিজেপির তরফ থেকে বেসরকারি বিল পেশ করাও অসম্ভব নয়। কারণ লোকসভা ভোটের আগে অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি থেকে মুখ ঘোরানোর জন্য উগ্র জাতীয়তাবাদের হাওয়া তোলারও চেষ্টা হচ্ছে। যা প্রতিদিন ক্রমশ প্রকট হচ্ছে।
এমন অবস্থায় নাম বিতর্কে প্রসঙ্গ সামনে আসতেই বিরোধিতার সুর চওড়া করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, ‘খবরটি সত্য। রাষ্ট্রপতির পরিচয় হিসাবে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ লেখা হয়েছে। তার মানে এখন সংবিধানের এক নম্বর অনুচ্ছেদে দেশের নামকে এইভাবে পড়তে হবে ‘ভারত, যা ইন্ডিয়া ছিল। সংবিধানের প্রথমভাগের শুরুতেই নাম এবং দেশের সীমানার উল্লেখ রয়েছে। দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। ফলে সরকারিভাবেই দেশের দুটি নাম সংবিধান-প্রণেতারা গ্রহণ করেছিলেন। সংবিধানের প্রথম ধারাতেই আরও বলা হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারত হলো রাজ্যগুলোর একটি সংঘ। নরেন্দ্র মোদী জমানায় সেই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ধারণাই আক্রান্ত’।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য শশী তারুর বলেছেন, ‘ভারত নাম ব্যবহার করতে কোনো সাংবিধানিক বাধা নেই। কারণ দেশের দু’টি সরকারি নামের একটি হলো ভারত।’
তারুর বলেন, ‘তবে আশা করি ইন্ডিয়া নাম সরকার একেবারে ছেড়ে দেয়ার বোকামি করবে না। কারণ, গত কয়েক শতাব্দী ধরে ইন্ডিয়া নামের একটা মূল্যবান ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হয়েছে।’
তার কথায়, ‘আমাদের উচিৎ ইতিহাসে লালিত নামের প্রতি দাবি ত্যাগ করে দুটি নামই ব্যবহার করা। এমন একটি নাম যা সারা বিশ্বে স্বীকৃত।’
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, বিরোধী জোট ইন্ডিয়া নাম রাখায় ওরা দেশের নাম পাকাপাকিভাবে ভারত করতে চাইছে। কিন্তু এবার যদি জোটের নাম ভারত রাখা হয়, তাহলে ওরা কি করবে? দেশের নাম বদলে বিজেপি করে দেবে?
কলকাতায় শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি শুনলাম ইন্ডিয়া নাম বদলে দেয়া হচ্ছে। আরে ভারত তো আমরা বলিই। এতে নতুন কী আছে! রাষ্ট্রপতি জি-২০ সম্মেলনের (G-20) জন্য যে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন সেই আমন্ত্রণপত্রে ইন্ডিয়ার পরিবর্তে ভারত লেখা হয়েছে। হঠাৎ করে কী হলো যে দেশের নাম বদলে দেয়া হবে! আমরা ইংরেজিতে বলি ইন্ডিয়া আর হিন্দিতে বলি ‘ভারত কা সংবিধান’। আমরা বলি—ভারত আমার ভারতবর্ষ, স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো। কিন্তু তা বলে ইন্ডিয়া নাম ত্যাগ করতে হবে? ওই নামে তো সারাবিশ্ব চেনে? এরা ইতিহাস বিকৃত করছে। কোনো দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম বদলে দেবে। যা ইচ্ছা বদলে দিচ্ছে। দেশের ঐতিহাসিক সৌধগুলির নামও বদলে দিচ্ছে।’
R/N
Administrative Contact:
Name: Fatama Akter Shiuly
Address: Sheikhghat Sylhet.
Postal Code: 3100
Email: siuliakter571@gmail.com
Phone: 880 1760275449
প্রধান সম্পাদক: ফাতেমা আক্তার শিউলী
প্রধান সম্পাদক: ফাতেমা আক্তার শিউলী Phone: 880 1760275449