সিলেট ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:২১ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩
অনলাইন ডেস্ক:
গত কয়েকদিনে মানুষের পকেট কাটার পরও পেঁয়াজ সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে আছে। অসাধু কারবারিরা পরিকল্পিতভাবে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা বাড়িয়ে ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি করে। এতে সোমবার পর্যন্ত খুচরা বাজারে ২৪০-২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। তারাই এখন নানা অজুহাতে ধীরে ধীরে দাম কমাচ্ছে। এতকিছু করার পরও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
প্রতিবছরের মতো এবারও চিহ্নিত সেই চক্র ধরাছোঁয়ার বাইরে। জরিমানা করে দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হলে আগামী দিনেও এ ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা আছে।
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর দেশে খাতুনগঞ্জ ও শ্যামবাজারের সিন্ডিকেট পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে। এসব বন্ধে রাজধানীসহ সারা দেশে খুচরা বাজার, পাইকারি ও আমদানি পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে সংশ্লিষ্টদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উধাও করা হয় পেঁয়াজ।
তবে এবারই প্রথম ভোক্তারা এক হয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেঁয়াজ কেনা থেকে বিরত থাকতে প্রচারণা চালানো হয়েছে। ফলে ক্রেতারা বাড়তি দরে পেঁয়াজ কেনা থেকে বিরত ছিলেন। অতিপ্রয়োজন না হলে কেউ পেঁয়াজ কেনেননি। পাশাপাশি দেশি নতুন পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফলে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সেই শক্তিশালী সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম কমাতে শুরু করেছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সূত্র জানায়, পেঁয়াজ আমদানিকারক ও আড়তদারদের একটি গ্রুপ সব সময় ওত পেতে থাকে। কখন ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, সেই অপেক্ষায় থাকে। অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা অজুহাতের অপেক্ষায় থাকে চক্রটি। সৃষ্টি করে কৃত্রিম সংকট। রাতারাতি অস্বাভাবিক গতিতে বাড়িয়ে দেয় পেঁয়াজের দাম। ২০১৯ সালে পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা কেজি থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। ওই সময় পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজির দায়ে চট্টগ্রাম ও টেকনাফকেন্দ্রিক ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সব সময়ই তারা থাকে অধরা।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যামবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তদার সিন্ডিকেট একসঙ্গে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে। তারা মুহূর্তে দাম বাড়িয়ে বিক্রি শুরু করে। পরিস্থিতি এমন- বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৯০-৯৫ টাকা বিক্রি হলেও ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর সেই একই পেঁয়াজ ১৮০ টাকায় বিক্রি করে। পাশাপাশি ৯০ টাকা কেজি দরে ভারতীয় পেঁয়াজ ১৭০ টাকায় বিক্রি করে। এছাড়া ৫৫ টাকা কেজি পাইকারি দরে বিক্রি হওয়া চীনা পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি করে। আর ৮০ টাকার পাকিস্তানি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৪০ টাকা। সেক্ষেত্রে দেখা গেছে, আড়ত থেকে বাড়তি দামে বিক্রি হওয়ায় খুচরা পর্যায়ে দাম হুহু করে বেড়েছে। এদিকে এমন পরিস্থিতি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরাও প্রমাণ পেয়েছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা হাবিবুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আড়তদারদের কারণে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তারা দাম না বাড়ালে খুচরা বাজারে দাম বাড়ত না। বেশি দামে কিনে এনে খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্রেতার কাছে বেশি দামে বিক্রি করেছে। তবে আড়তদাররা দাম বাড়ানোর কারণে প্রথম অবস্থায় খুচরা বিক্রেতারা আগের কম দামে কেনা পেঁয়াজও বেশি দামে বিক্রি করেছে, যা ঠিক না।
বুধবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা, যা একদিন আগে মঙ্গলবার ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দুই দিন আগে সোমবার বিক্রি হয় ২২০-২৪০ টাকা ছিল। আর বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, দাম কিছুটা কমলেও বৃহস্পতিবারের তুলনায় এখনো দেশি জাত কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, যা একদিন আগে ১৬০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়। আর দুই দিন আগে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। এছাড়া রাজধানীর খুচরা বাজারে পাতাসহ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। সঙ্গে মুড়ি কাটা নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজি, যা এক দিন আগে ১৩০-১৪০ টাকা ছিল।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে এবার দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়বে, তা আমরা কল্পনাই করতে পারিনি। কারণ, দেশে পেঁয়াজের জোগান ও সরবরাহ ভালো ছিল। পাশাপাশি নতুন জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছিল। এরপরও একটি মহল দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করে। তাই তাদের চিহ্নিত করে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রতিদিন সারা দেশে বাজারে অভিযান পরিচালনা করে অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এসে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতি যাতে আর না হয়, সেজন্য বাজারে তদারকি চলমান আছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. ইমদাদুল হক যুগান্তরকে বলেন, পেঁয়াজের দাম যেদিন থেকে বেড়েছে, সেদিন থেকেই কেনা একেবারে বন্ধ রেখেছি। বাসায় বলে দিয়েছিলাম দাম না কমলে পেঁয়াজ ব্যবহার করব না। দেখা গেছে, আমার মতো বেশির ভাগ ভোক্তা এবার একই কাজ করেছে। তাই বাজার সিন্ডিকেট এবার সুবিধা করতে পারেনি। তিনি বলেন, যারা পেঁয়াজের দাম নিয়ে ফের কারসাজি করল, তাদের বিরুদ্ধে সন্দেহজনকভাবে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
Administrative Contact:
Name: Fatama Akter Shiuly
Address: Sheikhghat Sylhet.
Postal Code: 3100
Email: siuliakter571@gmail.com
Phone: 880 1760275449
প্রধান সম্পাদক: ফাতেমা আক্তার শিউলী
প্রধান সম্পাদক: ফাতেমা আক্তার শিউলী Phone: 880 1760275449