ফাত্তাহ: ইসরায়েলে আঘাত হানা ইরানের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কতটা বিধ্বংসী

প্রকাশিত: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০২৪

ফাত্তাহ: ইসরায়েলে আঘাত হানা ইরানের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কতটা বিধ্বংসী

অনলাইন ডেস্ক:

ইসরায়েলে দ্বিতীয় দফায় প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলও এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডেলে বলা হয়েছে, তারা ইসরায়েলে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। তবে কোন সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র তারা ব্যবহার করেছে তা উল্লেখ করেনি।

মার্কিন থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরানের কাছে বিভিন্ন পাল্লার ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ হাজারো ক্ষেপণাস্ত্র আছে। তবে কোন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র কতগুলো আছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। কিন্তু ইউএস এয়ার ফোর্স জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি ২০২৩ সালে কংগ্রেসকে বলেছিলেন, ইরানের কাছে ৩ হাজারের বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আছে।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হলো এমন একধরনের ক্ষেপণাস্ত্র, যা সেটির উৎক্ষেপণ বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু করে বায়ুমণ্ডল হয়ে অধিবৃত্তাকার পথে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। ইসরায়েলে আঘাত হানা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করে বিশ্লেষকেরা সিএনএনকে বলেছেন, ইরান শাহাব-৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আরমামেন্ট রিসার্চ সার্ভিসেসের (এআরইএস) গবেষণা সমন্বয়কারী প্যাট্রিক সেনফ্টের মতে শাহাব-৩ হলো ইরানের সব মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভিত্তি। অর্থাৎ, এই সিরিজের ওপর ভিত্তি করেই ইরান অন্যান্য মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে থাকে।

শাহাব-৩ ২০০৩ সাল থেকে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি ৭৬০ থেকে ১ হাজার ২০০ কেজি পর্যন্ত ওয়ারহেড বহন করতে পারে। শাহাব-৩-এর নতুন প্রকরণ গদর ও এমাদ ক্ষেপণাস্ত্রের নির্ভুলতার রেঞ্জ ৩০০ মিটার বা ১০০০ ফুট। অর্থাৎ, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যে লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্র করে ছোড়া হয়, তার আশপাশের ১ হাজার ফুটের মধ্যেই আঘাত হানবে।

ইরানি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হামলায় তেহরান একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাত্তাহ-১’ ব্যবহার করেছে। তেহরান ফাত্তাহ-১কে একটি হাইপারসনিক (যা শব্দের গতির চেয়েও কয়েকগুণ বেশি দ্রুত চলতে পারে) ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে বর্ণনা করেছে। এই ফাত্তাহ-১-এর গতি মাক-৫; যার অর্থ এটি শব্দের গতির পাঁচগুণ অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ৩ হাজার ৮০০০ মাইল বা ৬ হাজার ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম।

তবে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, প্রায় সব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তাদের উড্ডয়ন পথের একটা সময়ে হাইপারসনিক গতিতে পৌঁছায়। বিশেষ করে যখন সেগুলো লক্ষ্যবস্তুর দিকে নামতে থাকে। উচ্চ গতি থাকার কারণে এগুলোকে গুলি করে ভূপাতিত করা কঠিন হয়ে যায়। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো ফ্যাবিয়ান হিঞ্জের মতে, ফাত্তাহ-১ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নয়। তিনি বলেন, তবে এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো—এটি অতি দ্রুত সময়ে এর গতিপথ বদলাতে পারে। যার কারণে এটিকে শনাক্ত করে বাধা দেওয়া কঠিন।

তবে অন্যান্য বিশ্লেষকের আশঙ্কা, ইরান এবারের হামলায় নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এ বিষয়ে মার্কিন সেনাবাহিনী সাবেক জ্যেষ্ঠ বিস্ফোরক অস্ত্র প্রযুক্তিবিদ ট্রেভর বল বলেন, ‘এটি তাদের নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটি এবং এটি ব্যবহার করার অর্থ হলো তাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারানো।’

আমাদের তথ্যচিত্র গান কবিতা নাটক ভালো লাগলে ফেসবুকে শেয়ার করুন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

0Shares