রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কি ভাঙতে হবে?

প্রকাশিত: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৮, ২০২৪

রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কি ভাঙতে হবে?

 

 

বেইলি রোডে ভবনে আগুন লাগার পর সেখান থেকে বের হওয়ার আলাদা কোনো জরুরি নির্গমন পথ ছিল না। কোনোমতে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে পড়েন কেউ কেউ। কিন্তু সেখান থেকেও নামার কোনো উপায় ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের ক্রেন গিয়ে আটকে পড়া অনেককে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ঝরে যায় ৪৬ জন মানুষের তাজা প্রাণ। এতে টনক নড়ে রাজউকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের। গত কয়েকদিন রাজধানীতে অভিযান পরিচালনা করছে সরকারি সংস্থাগুলো।

রাজধানীর অধিকাংশ বহুতল ভবন বা মার্কেটে আগুন লাগলে বের হওয়ার জন্য আলাদা করে জরুরি নির্গমন সিঁড়ি থাকে না। কোথাও কোথাও আগুন নেভানোর প্রাথমিক ব্যবস্থাও নেই। আবার যেসব ভবন রেস্টুরেন্ট চালানোর মতো করে তৈরি হয়নি, সেখানেও রেস্টুরেন্ট হয়ে ভবনগুলোকে অগ্নিকাণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

বেইলি রোডের ঘটনার পর রাজউক, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা এখন অভিযান চালাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বা রেস্টুরেন্ট পেলে সেগুলো সিলগালাও করে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অগ্নিঝুঁকিতে থাকা এসব ভবনের কী হবে? সেগুলো কি ভেঙে ফেলতে হবে? নাকি ভেঙে না ফেলেও ভবনগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব? এমন নানা প্রশ্ন ঘিরে এখন আলোচনা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, ঢাকায় অগ্নিঝুঁকিতে আছে এরকম ভবনের সংখ্যা ২ হাজার ৬০০ টিরও বেশি। তবে সংখ্যাটা বাস্তবে আরো বেশি হবে। কারণ, খোদ ফায়ার সার্ভিস বলছে ঢাকার সবগুলো ভবন তাদের জরিপে আসেনি। কিন্তু ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হলেই সেটি ভাঙতে হবে এমনটা নয়।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যেসব বহুতল ভবন আগুনের ঝুঁকিতে আছে, সেগুলোতে কিছু পরিবর্তন করে ঝুঁকিমুক্ত করা যায়। তিনি বলেন, এখানে মূল বিষয়টা হচ্ছে ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা বাড়াতে হবে। আপনি যে ভবনেই থাকেন, সেখানে সহজে বের হওয়ার রাস্তা আছে কি না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বহুতল ভবনে একাধিক সিঁড়ি রাখতে হয়। সেটা যদি না থাকে, তখন সিঁড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক সময় ভবনের বাইরেও আলাদা করে সিঁড়ি যুক্ত করা যায়। এছাড়া ফায়ার ডোর দিতে হবে, যেনো আগুনটা সিঁড়িতে চলে আসতে না পারে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, সিঁড়ি এবং ছাদ দুটোকেই ফাঁকা রাখতে হবে এবং ছাদ থেকে যেন সহজে উদ্ধার করা যায় সেরকম ব্যবস্থা থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই ফায়ার লিফট আছে যেটা আগুন কিংবা বিদ্যুৎহীন অবস্থাতেই চলে। সেটা ভবনে যুক্ত করা যাবে। তবে যেসব ভবনে এগুলো করার মতো অবস্থা নেই, যাচাই করে সেগুলোর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে রাজউককে।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান বলেন, বাংলাদেশে এখন অনেক আবাসিক ভবনে রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। বাণিজ্যিক ভবনেও রেস্টুরেন্ট হচ্ছে। যদিও বাণিজ্যিক হলেও ভবনের ডিজাইন এবং অনুমোদন মূলত অফিস বা অন্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য করা হয়ে থাকে, রেস্টুরেন্টের জন্য নয়। ফলে এসব ভবন থেকে রেস্টুরেন্টগুলো সরিয়ে নিলেই ঝুঁকি বহুগুণে কমে যাবে।

তিনি বলেন, গ্যাসের লাইন চেক করতে হবে নিয়মিত। সাধারণ রান্নাঘর আর রেস্টুরেন্টের রান্নাঘর, গ্যাস সংযোগ, লোড ক্যাপাসিটি ইতাদি ভিন্ন হয়। সেগুলো ঠিক না থাকলে ঠিক করতে হবে। তাহলে এমনিতে ঝুঁকি কমবে। এছাড়া স্মোক ডিটেক্টর, ফায়ার এক্সটিংগুইশারসহ নানারকম যন্ত্রপাতি আছে, সেগুলো ব্যবহার করতে এবং ট্রেনিং থাকতে হবে।

 

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন খুঁজবে কে?
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এক্ষেত্রে রাজউককেই দায়িত্ব নিতে হবে। যদিও একের পর এক অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলেও সংস্থাটি থেকে এর আগে সে উদ্যোগ দেখা যায়নি। যে ভবনে রেস্টুরেন্ট থাকার কথা নয়, সেখানে রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠলেও রাজউক সেটি নজরদারির ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলেও অভিযোগ। তবে এখন রাজউক তো বটেই সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোর তরফেও অভিযান দেখা যাচ্ছে।

চাপে পড়ে রাজউকও এখন বলছে, শিগগিরই ঢাকার অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবন চিহ্নিত করার কাজ শুরু করবে তারা। কিন্তু সংস্থাটির কি সে সক্ষমতা আছে? এর উত্তরে রাজউক বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার কাজ করা হবে তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে।

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলছেন, ঢাকার ৮টি জোন অফিসে ৮টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে এ কাজের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে। এসব প্রতিষ্ঠান সরেজমিন নিজ নিজ এলাকায় প্রতিটি ভবন পরিদর্শন করবে। প্রয়োজনে বিস্তারিত ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করবে। তারাই ভবনগুলোর সেফটি প্রটোকল দিয়ে দেবে যে, কী কী করতে হবে। আর যেগুলো অতি ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে, সেগুলোতে আমরা নোটিশ টাঙিয়ে দিবো, যেন সাধারণ মানুষ সেখানে না যায়।

R/N

আমাদের তথ্যচিত্র গান কবিতা নাটক ভালো লাগলে ফেসবুকে শেয়ার করুন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ